হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন একটি আনুষ্ঠানিক শোক বার্তা
ম্যাককেইনকে ‘বীর যোদ্ধা’ নামে অভিষিক্ত করে একটি খসড়া বার্তা প্রস্তুতও করেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু ট্রাম্পের নির্দেশে সেটি বাতিল করা হয়।
এই অপমান করেই থেমে থাকেননি ট্রাম্প; এমনিতে কোনো জাতীয় নেতার মৃত্যু হলে শেষকৃত্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নিয়ম রয়েছে।
ম্যাককেইনের ক্ষেত্রে গত রোববার সে পতাকা যথারীতি অর্ধনমিত থাকলেও গতকাল সকালে ফের তা পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়।
এই নিয়ে চতুর্দিকে প্রবল সমালোচনা শুরু হলে গতকাল দুপুরের পর জাতীয় পতাকা পুনরায় অর্ধনমিত রাখার ব্যবস্থা হয়।
এদিন সাংবাদিকেরা বারবার ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, ম্যাককেইনকে তিনি ‘বীর যোদ্ধা’ মনে করেন কি না।
প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে মুখ বুজে থেকেছেন ট্রাম্প। অবস্থার পরিবর্তন হয় গতকাল বিকেলে।
সাবেক সৈনিকদের একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্প একটি লিখিত বিবৃতি পড়ে শোনান, যেখানে তিনি জানান,
রাজনীতি ও নীতিগত প্রশ্নে তাঁদের ব্যক্তিগত মতভেদ থাকলেও দেশের প্রতি ম্যাককেইনের অবদান তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জানা গেছে, টেলিভিশনে ক্রমাগত সমালোচনার মুখে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন ট্রাম্প। চিফ অব স্টাফ জন কেলি ও প্রেস সেক্রেটারি সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্সও তাঁকে মত বদলাতে উৎসাহিত করেন।
ট্রাম্প ও ম্যাককেইনের মতবিরোধ কোনো গোপন ব্যাপার নয়।
ম্যাককেইন পাঁচ বছরের বেশি সময় ভিয়েতনামে যুদ্ধবন্দী ছিলেন।
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন,
যুদ্ধের নায়ক হিসেবে তিনি যুদ্ধবন্দীদের নয়, যাঁরা যুদ্ধ থেকে জয়ী হয়ে ফিরে আসে, তাঁদের পছন্দ করেন।
এই মন্তব্যের কারণে ম্যাককেইন তাঁকে খোলামেলাভাবে অপছন্দ করতেন। গত বছর ম্যাককেইনের ‘না’
ভোটের কারণে সিনেটে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচি বাতিলের পক্ষে একটি খসড়া আইন গৃহীত হতে পারেনি।
সে জন্য ট্রাম্প তাঁকে কঠোরভাবে আক্রমণ করেছিলেন।
ম্যাককেইনের মৃত্যুর পরেও এই বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা প্রকাশে ট্রাম্পের ব্যর্থতাকে অনেকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন।
রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্স বলেছেন, নিজের ব্যক্তিগত মনোভাবকে অগ্রাধিকার দিয়ে একজন প্রকৃত আমেরিকান বীরের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প।
নিউইয়র্ক টাইমসের ভাষ্যকার ফ্রাঙ্ক ব্রুনির মতে, শুধু অতি-আত্মমগ্ন একজনের পক্ষেই এমন আচরণ সম্ভব।
ট্রাম্প নিজে ম্যাককেইন সম্বন্ধে ইতিবাচক কোনো কথা বলতে অপারগ হলেও তাঁর মেয়ে ইভাঙ্কা সে অভাব পূরণ করেছেন।
গতকাল ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে ইভাঙ্কা ম্যাককেইনকে ‘একজন আমেরিকান দেশপ্রেমিক’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ৬০ বছরেরও বেশি সময় ম্যাককেইন যুক্তরাষ্ট্রের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
ট্রাম্পের প্রতি শেষ হাসিটি অবশ্য হেসেছেন ম্যাককেইনই। মৃত্যুর আগে তিনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন,
তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যেন ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো না হয়।
তাঁর বদলে তিনি সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাকে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ জানানোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
Disqus comments